দেশের রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন ফেলে দিয়ে উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে হঠাৎই ইস্তফা দিলেন জগদীপ ধনখড়। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে পাঠানো চিঠিতে তিনি “স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার” দেওয়ার কথা বললেও, তাঁর এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত ঘিরে জাতীয় রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা। বাংলার রাজ্যপাল হিসেবে তাঁর বিতর্কিত ভূমিকা এবং সরকারের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতের স্মৃতি এখনও টাটকা। তাই প্রশ্ন উঠছে, এই পদত্যাগের নেপথ্যে কি শুধুই স্বাস্থ্যগত কারণ, নাকি রয়েছে অন্য কোনো রাজনৈতিক সমীকরণ?
রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া চিঠিতে তিনি অবিলম্বে তাঁর পদত্যাগ কার্যকর করার কথা জানিয়েছেন। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী পরিষদকে ধন্যবাদ জানালেও, তাঁর এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে দেশের রাজনৈতিক মহলে একটি বড় শূন্যস্থান তৈরি করল, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
মূল বিষয়গুলির রূপরেখা (Outline of Main Points):
- বড় খবর: উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
- সরকারি কারণ: স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার কথা জানিয়েছেন তিনি।
- রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: বাংলার রাজ্যপাল হিসেবে তাঁর कार्यकाल ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত।
- নির্বাচনের পরিসংখ্যান: 2022 সালের 11ই আগস্ট তিনি 528টি ভোট পেয়ে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
- মূল প্রশ্ন: তাঁর এই হঠাৎ পদত্যাগের পিছনে কি অন্য কোনো রাজনৈতিক কারণ রয়েছে?
রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া চিঠিতে যা লিখলেন ধনখড়
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে জগদীপ ধনখড় লিখেছেন, “স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে এবং চিকিৎসা পরামর্শ মেনে চলার জন্য, আমি সংবিধানের 67(A) অনুচ্ছেদ অনুসারে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করছি। এখন থেকেই তা কার্যকর।“
চিঠিতে তিনি রাষ্ট্রপতিকে তাঁর সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যেকার চমৎকার কাজের সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা এবং সমর্থন অমূল্য, এবং আমি আমার দায়িত্বকালে অনেক কিছু শিখেছি।“
রাজনৈতিক কর্মজীবন: বিতর্ক ও উত্থান
জনতা দল, কংগ্রেস হয়ে অবশেষে ২০০৮ সালে বিজেপিতে যোগ দেন জগদীপ ধনখড়। তবে তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবনে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি এবং বিতর্ক তৈরি হয় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর। সেই সময় বাংলায় ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকারের সঙ্গে তাঁর সংঘাত চরমে ওঠে। একাধিকবার তাঁকে বিজেপির ‘এজেন্ট‘ হিসেবেও তকমা দেওয়া হয়।
এই বিতর্কের মধ্যেই তিনি বিজেপির প্রার্থী হিসেবে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের ১১ই আগস্ট, তিনি বিরোধীদের যৌথ প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। ধনখড় পেয়েছিলেন 528টি ভোট, যেখানে আলভা পেয়েছিলেন মাত্র 182টি।
সুপ্রিম কোর্ট এবং রাজস্থান হাইকোর্টে তাঁর দীর্ঘ আইনি কেরিয়ার রয়েছে। অতীতে চন্দ্রশেখর সরকারে অল্প সময়ের জন্য সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। রাজস্থানে জাট সম্প্রদায়কে ওবিসি মর্যাদা দেওয়ার মতো বিষয়গুলিতেও তাঁর সমর্থন ছিল উল্লেখযোগ্য। তাঁর এই আকস্মিক পদত্যাগে তাই রাজনৈতিক মহল কিছুটা হলেও বিস্মিত।