প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন কি ভেঙে চুরমার হয়ে গেল NIOS-D.El.Ed. প্রার্থীদের? এক ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে, যার ফলে লক্ষাধিক প্রার্থীর ভবিষ্যৎ এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কঠোর নিয়মকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা এই মামলায় সর্বোচ্চ আদালত পর্ষদের পক্ষেই রায় দেওয়ায়, প্রায় ৯৯% প্রার্থীর চাকরি পাওয়ার পথই বন্ধ হয়ে গেল বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মাননীয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের এই কড়া সিদ্ধান্তে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় নথি যাচাইয়ের নিয়মই বহাল থাকল। এর ফলে যে সমস্ত প্রার্থী সব নথি জোগাড় করতে পারবেন না, তাঁরা সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়ার বাইরে চলে যাবেন।
মূল বিষয়গুলির রূপরেখা (Outline of Main Points):
- বড় রায়: সুপ্রিম কোর্ট NIOS-D.El.Ed. প্রার্থীদের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছে।
- মামলার কারণ: পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চাওয়া 12টি নির্দিষ্ট নথি জমা দেওয়ার নিয়মের বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছিল।
- আদালতের পর্যবেক্ষণ: সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় নথি যাচাই ছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্ভব নয়।
- মামলার পরিণতি: মামলাটি “Dismissed as Withdrawn” অর্থাৎ, আবেদন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই খারিজ হয়ে যায়।
- প্রভাব: প্রায় 99% NIOS প্রার্থীর পক্ষে সমস্ত নথি জমা দেওয়া কঠিন হতে পারে, যা তাঁদের চাকরির পথ প্রায় বন্ধ করে দেবে।
মামলার প্রেক্ষাপট: কেন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রার্থীরা?
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE) শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল, সেখানে প্রার্থীদের পরিচয়ের প্রমাণপত্র হিসেবে 12টি নির্দিষ্ট নথি যাচাইয়ের জন্য জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু অনেক NIOS-D.El.Ed. প্রার্থীর পক্ষেই এই সমস্ত নথি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
এই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে প্রার্থীরা আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁদের মূল আবেদন ছিল, নথি যাচাইয়ের প্রক্রিয়া যেন কিছুটা শিথিল করা হয়। তাঁরা চেয়েছিলেন, কম সংখ্যক নথি বা কোনো বিকল্প নথি জমা দিয়েও যেন তাঁদের যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়, যাতে তাঁরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন।
সুপ্রিম কোর্টের কড়া পর্যবেক্ষণ
মাননীয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলাকালীন আবেদনকারীদের আইনজীবীকে বেশি সময় দেওয়া হয়নি। প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে নথি যাচাই অপরিহার্য। তিনি বলেন, “কোনো রকম যাচাই ছাড়া এবং কোনো প্রকার নথি বিবেচনা না করে নিয়োগ দেওয়া যায় না।”
আদালতের মতে, NIOS-D.El.Ed. সংক্রান্ত বিষয়গুলি এর আগেও একাধিকবার ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে নতুন করে আলোচনার কোনো অবকাশ নেই। আদালত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নিয়মকেই মান্যতা দেয়।
চূড়ান্ত রায় এবং তার পরিণতি
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর, সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি খারিজ করে দেয়। মামলার অফিসিয়াল স্ট্যাটাসে এটিকে “Dismissed as Withdrawn” হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর অর্থ হলো, আদালত মামলাটি গ্রহণ করতে রাজি হয়নি এবং আবেদনকারীদের মামলাটি প্রত্যাহার করতে বলা হয়, যার ফলে এটি খারিজ হয়ে যায়। এটি আবেদনকারী প্রার্থীদের জন্য একটি বিরাট ধাক্কা।
প্রার্থীদের উপর প্রভাব: ৯৯% কি বাদ পড়তে চলেছেন?
সুপ্রিম কোর্টের এই চূড়ান্ত রায়ের ফলে NIOS-D.El.Ed. প্রার্থীদের সামনে আর কোনো বিকল্প পথ খোলা রইল না। প্রাথমিক শিক্ষক পদে আবেদন করতে হলে তাঁদের পর্ষদের নির্ধারিত সমস্ত 12টি নথিই জমা দিতে হবে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় 99 শতাংশ NIOS প্রার্থীর পক্ষেই হয়তো এই সমস্ত নথি জোগাড় করা সম্ভব হবে না। যদি তাই হয়, তবে লক্ষাধিক প্রার্থীর প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে এবং তাঁরা নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে স্বাভাবিকভাবেই ছিটকে যাবেন।